#"অন্ধকারের অরূপ"
গ্রীষ্মের রাতে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। শহরের বাইরে থাকার কারণে এখানে কোনও রাস্তার আলো ছিল না। আমার গাড়ির ফ্ল্যাশলাইটই ছিল আমার একমাত্র আলোর উৎস। হঠাৎ, গাড়ি থেমে গেল। এভাবে মাঝে মাঝে গাড়ি থেমে যাওয়া আমার নতুন নয়, কিন্তু এই নির্জন স্থানে একা থাকার অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন ছিল।
আমি গাড়ি থেকে নেমে ইঞ্জিন দেখতে লাগলাম। হঠাৎ, পেছন থেকে একটা আওয়াজ শোনা গেল। কোনও মানুষের পায়ের আওয়াজ। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি, এক বৃদ্ধা আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। তিনি ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।
"তুমি কি সাহায্য চাও?" তিনি বললেন।
আমি একটু ভীত হয়ে বললাম, "আমার গাড়ি ঠিকমতো চলছে না। আপনি কি জানেন কাছাকাছি কোনও গ্যারেজ আছে?"
বৃদ্ধা একটু হাসলেন। "হ্যাঁ, আছে। আমাকে অনুসরণ করো।"
আমি বৃদ্ধাকে অনুসরণ করতে লাগলাম। তিনি আমাকে জঙ্গলের আরও গভীরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথের ধারে কিছু পুরনো বাড়ি ছিল, কিন্তু কোনও আলো ছিল না। বৃদ্ধা হঠাৎ থেমে গেলেন এবং বললেন, "এই বাড়ির ভিতরে গ্যারেজ আছে। তুমি এখানে গাড়ি নিয়ে আসতে পারো।"
আমি বৃদ্ধার কথামতো গাড়ি নিয়ে আসলাম। তিনি দরজা খুলে দিলেন, আমি গাড়ি ঢুকালাম। ভিতরে একটা পুরনো গ্যারেজের মতোই দেখাচ্ছিল। কিন্তু কোনও গ্যারেজ মেকানিক বা কোনও যন্ত্রপাতি দেখা গেল না।
বৃদ্ধা বললেন, "তুমি ভিতরে এসো, আমি তোমার জন্য কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করছি।"
আমি বৃদ্ধার সাথে ভিতরে গেলাম। ঘরের ভিতরটা অন্ধকার এবং ঠাণ্ডা ছিল। বৃদ্ধা একটা ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলেন। ল্যাম্পের আলোয় আমি দেখতে পেলাম, ঘরের দেয়ালে কিছু অদ্ভুত ছবি টাঙানো। ছবিগুলোতে মানুষের মুখ ছিল, কিন্তু তাদের চোখগুলো ফাঁকা।
আমি একটু ভীত হয়ে উঠলাম। "আমি কি এখান থেকে একটু বাইরে গিয়ে ফোনে কথা বলতে পারি?" আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
বৃদ্ধা একটু হাসলেন। "এখানে ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। তুমি আমার সাথে বসো, আমি তোমার জন্য খাবার আনছি।"
আমি বৃদ্ধার কথা বিশ্বাস করলাম না, কিন্তু কিছুই করার ছিল না। আমি বসে রইলাম। বৃদ্ধা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। আমি চারদিকে তাকাতে লাগলাম। হঠাৎ, আমি দেখতে পেলাম এক দরজা খোলা। দরজার ভিতর থেকে আলো বেরোচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে সেই দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।
দরজার ভিতরে একটা বড় ঘর। ঘরের মেঝেতে কিছু লেখার চিহ্ন ছিল। লেখাগুলো ছিল কিছু অদ্ভুত ভাষায়। ঘরের এক কোণে একটা পুরনো আয়না ছিল। আমি আয়নার দিকে তাকালাম, কিন্তু আমার প্রতিবিম্ব দেখা গেল না। আয়নার মধ্যে শুধু অন্ধকার দেখা যাচ্ছিল।
হঠাৎ, আয়নার ভিতর থেকে একটা হাত বেরিয়ে এল। হাতটা আমাকে টেনে আনার চেষ্টা করছিল। আমি ভয়ে চিৎকার করতে লাগলাম, কিন্তু কোনও আওয়াজ বেরোল না। বৃদ্ধা হঠাৎ ঘরে এসে আমাকে টেনে নিয়ে এলেন।
"তুমি কেন এখানে এসেছো?" তিনি বললেন। তাঁর চোখগুলো অদ্ভুত ভাবে জ্বলছিল।
আমি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললাম, "আমি শুধু দেখতে এসেছিলাম।"
বৃদ্ধা হেসে বললেন, "তুমি এই জায়গায় একবার প্রবেশ করলে আর কখনও বেরোতে পারবে না।"
বৃদ্ধার কথা শুনে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। আমি দরজার দিকে দৌড়াতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু দরজা বন্ধ হয়ে গেল। ঘরের আলো নিভে গেল। আমি চারদিকে অন্ধকার দেখতে পেলাম।
হঠাৎ, আমার চারপাশে অনেক অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যেতে লাগলো। ঘরের মেঝে থেকে কিছু ছায়ামূর্তি বেরিয়ে আসতে লাগলো। তারা আমাকে ঘিরে ধরল।
আমি চিৎকার করতে লাগলাম, কিন্তু কোনও আওয়াজ বেরোল না। ছায়ামূর্তিগুলো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি সমস্ত শক্তি দিয়ে তাদের থেকে পালানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু কোনও লাভ হলো না।
হঠাৎ, ঘরের মেঝে ফাটল ধরলো। আমি দেখতে পেলাম, মেঝের নিচে একটা অন্ধকার গর্ত। ছায়ামূর্তিগুলো আমাকে সেই গর্তের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
আমি শেষ পর্যন্ত চিৎকার করে উঠলাম, "কেউ আমাকে বাঁচাও!"
কিন্তু কেউ শোনেনি। আমি অন্ধকার গর্তে হারিয়ে গেলাম।
এখন, আমি সেই অন্ধকারে বাস করি। আমি প্রতিদিন অপেক্ষা করি, কেউ যেন আমাকে খুঁজে পায়। কিন্তু কেউ আসেনি। আমি একা, এই অন্ধকারের অরূপে।
Comments
Post a Comment